রিপোর্টার্স বিডি ডট কম : তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ভোগান্তি কমেনি দুর্গত পরিবারদের। সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, পয়নিষ্কাশনের সঙ্কট চরমে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো বাড়িতে ফিরে গেলেও অনেকের রান্না ঘর পানিতে তলিয়ে রয়েছে। চরাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ির কাঁচা টয়লেট বন্যার তোড়ে ভেসে যায়। নলকূপগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৯ টায় বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ১০ সেন্টিামটার ও বিকেল ৩টায় ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ত্রাণ সামগ্রীর অভাবে খাদ্য সঙ্কটে পড়েছেন ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খালিশা চাপানী, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, ছাতুনামা, বাঘের চর, ঝাড়সিংহেশ্বরের নিম্নাঞ্চল এবং চরবাসী। খাদ্য সঙ্কটের কারণে ত্রাণ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামের স্বপন বাঁধের ২০০ মিটার মাটির বাঁধের প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিস্তার দুর্গম এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার, খাবার পানি ও পয়নিষ্কাসনে চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের মকবুল হোসেনের স্ত্রী জমিলা বেগম (৪০) জানান, রাতে প্রবল বন্যার কারণে তিস্তার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সরকারিভাবে কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। এমনকি ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বর কোনো খোঁজ খবর নেননি। ফজল আলীর স্ত্রী আজেদা বেগম (৪৮) বলেন, প্রবল বন্যার রাতে কিছু খেতে পারিনি। বাড়িতে গিয়ে সকালে রান্না করবো তারও সুযোগ নেই। রান্না ঘরের চুলা হাঁটু পানিতে তলিয়ে আছে। নলকূপ পানির নিচে ডুবে রয়েছে। একই গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে আয়নাল (৪০) জানান, তিস্তার প্রবল স্রোতের কারণে কাঁচা পায়খানাগুলো ভেসে গেছে। এলাকায় শুকনো খাবারের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পূর্ব বাইশ পুকুর গ্রামের সহিদুল ইসলাম (৩৮) জানান, তার পুকুরের ৭ হাজার টাকার পোনা মাছ বন্যার কারণে রাতে বের হয়ে যায়। খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজান আলী জাগো নিউজকে বলেন, পূর্ব বাইশপুকুর ২টি ও পশ্চিম বাইশপুকুরের ১টি মাটির বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানান, পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামের স্বপন বাঁধটি চরম হুমকিতে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধটি পাইলিংসহ সিসি ব্লক না দিলে ৩টি গ্রাম তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে পড়বে। খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন জানান, কিসামত ছাতনাই চরের ২৫৫টি পরিবারকে রাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়। সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় স্থানীয়দের সহায়তার রাতে শুকনা চড়িা গুড় বিতরণ করা হয়েছে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডে ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ১০ সেন্টিমিটার ও বিকেল ৩টায় বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন Blogger Facebook