রিপোর্টার্স বিডি ডট কম : ধর্ম অবমাননার অভিযোগে কারান্তরীন মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর জামিনের বিরুদ্ধে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছে হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামি দলগুলো। বিক্ষোভ থেকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, লতিফ সিদ্দিকীর ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না হেফাজতে ইসলাম।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে শুক্রবার বাদ জুমা বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী এ ঘোষণা দেন।
মাওলানা কাসেমী বলেন, ‘মুরতাদ লতিফ সিদ্দিকীকে জামিনে মুক্তি দিয়ে সরকার মুসলমানদের অন্তরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ আগুন নেভাতে অবিলম্বে পুনরায় তাকে গ্রেফতার করতে হবে।’
ধর্ম অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন পাশের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ আইন পাশের মাধ্যমে লতিফ সিদ্দিকীসহ সকল নাস্তিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করে ফাঁসি না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। হেফাজতে ইসলাম এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না।’
হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী সবার সঙ্গে আলোচনা করে শীঘ্রই এ ইস্যুতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও জানান নূর হোসাইন কাসেমী।
হেফাজতের সংক্ষিপ্ত এ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে হেফাজতভুক্ত দল— খেলাফত মজলিশের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, খেলাফত আন্দোলনের ঢাকা মহানগর আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে হেফাজতে ইসলাম পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বায়তুল মোকারম উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পুরানা পল্টন মোড় ঘুড়ে,দৈনিক বাংলা হয়ে আবার উত্তর গেটে গিয়ে শেষ হয়। একই দাবিতে এর আগে পৃথকভাবে মিছিল বের করে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ এবং চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলনের ছাত্র সংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। পরে খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিশের নেতাকর্মীরা হেফাজতের কর্মসূচিতেও শরিক হন। এ সময় তারা লতিফ সিদ্দিকীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
এদিকে একই দাবিতে রাজধানীর লালবাগ শাহী জামে মসজিদ থেকে বাদ জুমা মিছিল বের করে ইসলামী ঐক্যজোট। দলটির চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ এতে নেতৃত্ব দেন।
২৯ জুন দীর্ঘ কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হন মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে হজ, মুহাম্মদ (সা.), তাবলীগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করেন তিনি। এরপর সারাদেশে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা হতে থাকে। গত ১২ অক্টোবর তাকে মন্ত্রিসভা থেকে এবং ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীসহ প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২৩ নভেম্বর তিনি ভারত হয়ে দেশে ফেরার পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে জামিন না দিয়ে জেল-হাজতে প্রেরণ করেন।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। শুক্রবার এসব সংগঠনের সারাদেশে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন।
এদিকে, বায়তুল মোকাররমে ইসলামী দলগুলোর কর্মসূচিকে ঘিরে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররম ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মুনতাসিরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, যে কোনো কর্মসূচিকেকে কেন্দ্র করে পুলিশের আগাম প্রস্তুতি থাকে। আজও (শুক্রবার) আছে। এটা রমজান মাস। মানুষ এ মাসে সহনশীল থাকে। আশা করছি, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও এর আশপাশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। জননিরাপত্তায় যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা নেব। পরিস্থিতির অবনতি হলে জননিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করব।
তবে, শেষ পযন্ত ইসলামী দলগুলোর কর্মসূচিতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন Blogger Facebook